গল্পঃ অচেনা ভালোবাসা | Story :: Ochena Valobasha (Part-07)

 

#অচেনা ভালোবাসা
[পর্ব - ৭]
লেখক - আবির চৌধুরী 
 
তারপর নুপুর তার সব কিছু আমাকে বলতে শুরু করে দিল।
নুপুর -- ছেলেটা আমার কলেজের ছিল, আমাকে ছেলে টা একদিন হঠাৎ করে প্রপোজ করে বসল। আমি প্রথমে রাজি না থাকলেও পরে এক্সিপ্ট করলাম। ছেলেটা মানুষের উপকার করত। হয়তো সেসব আমাকে দেখিয়ে করছে আমি বুঝতে পারি নাই৷ তার এসব দেখে আমি রাজি হয়ে ছিলাম। তারপর আমাদের রিলেশন শুরু হয়ে গেলো। অনেক দিন যাবার পরে ও আমার কাছে টাকা চাইল।
 
 আমিও টাকা দিয়ে দিলাম। তারপর থেকে ছেলেটার দিন দিন চাহিদা বাড়তে থাকে। কখনও না করতাম না। কিন্তু হঠাৎ করে ওকে একটা মেয়ের সাথে দেখলাম। তখনও কিছু বলি নাই। তারপর অনেকের কাছে জানতে পারি ছেলেটা আরো অনেক গুলা রিলেশন করে। খুব খারাপ লাগলো কথাটা শুনে তাও বিশ্বাস করি নাই কারো কথা। একদিন কলেজে গিয়ে দেখি আরেকটা মেয়ের হাত ধরে বসে আছে। এটা দেখে আমার রাগ বেড়ে গেলো আমি ছেলেটার দিকে এগিয়ে গেলাম। ছেলেটার নাম ছিলো নীল।
আমি গিয়ে নীলের কলার টান দিয়ে তুলে একটা থাপ্পড় দিলাম। 
 
-- এসব কি নীল? তুমি আমাকে দিনের পর দিন এই ভাবে ঠকালে কেন? আমি তোমার কি ক্ষতি করছি?
নীলের পাশের মেয়েটা বলল -- আপনি এসব কি বলছেন আপু? আপনাকে ঠকাইছে মানে কি?
-- নীলের সাথে আমার ৬ মাসের রিলেশন।
-- কি! আমার সাথে তো এক বছরের রিলেশন। নীল এসব কি?
নীল -- নুপুর আমি তোমাকে পরে সব বলছি প্লিজ তুমি যাও। 
 
নুপুর -- আরে তুই কি করে ভাবলি আমি তোর সাথে আর যোগাযোগ রাখব! তুই তো মানুষের মন নিয়ে খেলা করিস।
এই কথা বলে আমি ওখান থেকে চলে আসলাম। খুব খারাপ লাগছিলো আমার। তারপর ও আমাকে অনেক গুলা কল দিল আমি রিসিভ করি নাই পরে সব কিছু থেকে ব্লক করে দিলাম।
নুপুর এই কথা বলতেই তার চোখ দিয়ে পানি পড়ে গেল। নুপুরকে সান্ত্বনা দেওয়ার মতো আমি কোনো কিছু খুঁজে পেলাম না। চুপ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম। 
 
নুপুর -- আচ্ছা বলতে পারেন মানুষ এমন হয় কেন? মানুষ কেন মন নিয়ে খেলা করে!
আমি নুপুরের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে পানি। আমি নুপুরের চোখের পানি মুছে দিলাম। আজ প্রথম নুপুর কে স্পর্শ করলাম। নুপুর আমার দিকে তাকিয়ে আছে অপলকভাবে। তারপর আমি বললাম -- আসলে আমরা মানুষ রা সব সময় নিজেদের কথা ভাবি৷ আমাদের জন্য কার কি হচ্ছে সেটা দেখিনা। কারণ আমরা চাই আমিরা আমদের টা পেলেই হয়৷ অন্যের চিন্তা আমরা করিনা। আসলে কিছু কিছু মানুষ আছে যারা মানুষকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ পায়৷ কিন্তু যাকে সে কষ্ট দিচ্ছে তার কতটা কষ্ট হয় সেটা সে উপলব্ধি করতে পারেনা। মানুষ এমনি হয়৷ 
 
নুপুর আমার কথা শুনে চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি আবার বললাম -- নিজেকে অন্যের জন্য কষ্ট দিবেনা। নিজেকে ভালোবাসুন। আর যে আপনাকে কষ্ট দিবে তাকে দেখিয়ে দিন আপনার কোনো কষ্ট নেই। মানুষের সামনে কখনও নিজের কষ্ট দেখাবেননা। কারণ এই দুনিয়ার মানুষ গুলা অদ্ভুত হয়৷ এরা অন্যের কষ্ট দেখে মজা নেয়। 
 
নুপুর -- হুম তা ঠিক আমি সেটা বুঝতে পারছি তাই এই কথা আর কাওকে বলি নাই। আজ আপনাকে বললাম কিন্তু কেন বললাম নিজেও জানিনা।
-- বাদ দেন এসব কথা,
-- একটা কথা জিজ্ঞেস করবো!
-- জ্বী করুন। 
 
-- আসলে আপনাকে দেখলে আমার কেন জানি মনে হয় আপনার জীবনে অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে কিন্তু আপনি আমাকে তা বলছেন না।
-- না আমার জীবনে কোনো কষ্ট নেই। অনেক রাত হলো এবার যেতে হবে।
-- ঠিক আছে চলুন তা হলে। 
 
তারপর আমি আর নুপুর চলে গেলাম যে যার রুমে। আমি আমার রুমে গিয়ে খাটের উপরে শুয়ে আছি। কিছু ভালো লাগছেনা। মা বাবাকে ছেড়ে আজকে অনেক দিন ধরেই অনেক দূরে সরে আছি। জানিনা আমার মা বাবা কেমন আছে। তারা কি আমার খোঁজ করছে? নাকি এখনও আমার উপরে অভিমান করে বসে আছে। হয়তো অভিমান করেই আছে। অভিমান তো করার ও কথা। কিন্তু আমি যে সব সহ্য করতে পারি অবহেলা সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানিনা। সকালে কারো ডাকে ঘুম ভেঙে গেলো। তাকিয়ে দেখি নুপুর আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নুপুর কে দেখে আমি চোখ সরাতে পারছেনা। মনে হয় আমার সামনে একটা লাল পরি দাঁড়িয়ে আছে। আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি ওর দিকে। 
 
-- এই ভাবে তাকিয়ে থাকলে মশা যাবে মুখে।
নুপুরের কথা শুনে আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। একটু তো লজ্জা পেলাম কিন্তু ওকে বুঝতে দেই নি।
-- তাড়াতাড়ি করে উঠন আপনাকে একটা যায়গায় বিয়ের দাওয়াত খেতে যাবো। আম্মু আর বাধন ও আমাদের সাথে যাবে। সবাই রেডি হয়ে আছে। এই জামা পড়ে ড়েডি হয়ে আসুন আমরা অপেক্ষা করে বসে আছি। 
 
তারপর নুপুর আমার রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি পাশে তাকিয়ে দেখি অনেক গুলা নতুন জামা প্যান্ট এনে রেখেছে। আমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে চলে আসলাম। নুপুর আমাকে দেখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে আজকে একটু বেশি পরিপাটি হলাম।
আন্টি -- তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে জাহিদ।
আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে বললাম চলুন এখন। 
 
তারপর আমরা সবাই বের হয়ে গেলাম। নুপুর গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসল। আমাকে ডাক দিয়ে তার পাশে বসালো। তারপর নুপুর নিজের মতো গাড়ি চালাতে শুরু করে দিল। বিয়ে বাড়িতে গিয়ে জানতে পারলাম নুপুরের বান্ধুবীর বিয়ে৷ নুপুরের অনেক বান্ধুবী সেখানে এসেছে। সবাই আমাদের দেখে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো। ভাই কি বলব মেয়ে গুলা এত্তো কিউট আমি সব গুলার উপরে ক্রাশ খেয়ে গেলাম। আন্টি আমাদের আগেই ভিতরে চলে গেলো বাধন কে নিয়ে। আমি আর নুপুর পরে গেলাম। নুপুর আর আমি ভিতরে ঢুকতে সবাই আমাদের দিকে এগিয়ে আসল। মেয়ে গুলা আমার দিকে তাকিয়ে আছে তারপর নুপুর সবার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। 
 
-- হাই আমি নিলা,
এই ভাবে সবাই সবার পরিচয় দিচ্ছে। নুপুরের ডাক পড়লো তাকে তার আম্মু ডাকছে নুপুর চলে গেলো। আমি গিয়ে একটা চেয়ারে বসে রইলাম। নিলা আমার দিকে এগিয়ে আসল।
নিলা -- এই যে মিস্টার আপনি কি সিংগেল?
আমি -- হুম ক্যান? 
 
-- এমনি আপনার নাম্বার টা কি দেওয়া যাবে?
এমন সময় আরেকজন চলে আসলো এসেই বলছে কিরে নিলা তুই আমার ক্রাশের সাথে কিসের কথা বলিস?
আমি এদের কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এরা আমার সামনে ঝগড়া শুরু করে দিল। আমি ওখান থেকে সরে গেয়ে অন্য একজায়গায় গিয়ে বসলাম। 
 
আমি হালকা একটু ধুরে গিয়ে বসে আছি কিন্তু তাদের কথা আমি শুনতে পারছি।
নিলা তার বান্ধুবী দের বলছে -- সবাই জেনে রাখ এটা তোদের দুলাভাই কেউ নজর দিবি না কিন্তু কেউ।
-- ওটা তোর দুলাভাই হবে। ও শুধু আমার আর কেউ নজর দিবিনা। 
 
এমন সময় নুপুর চলে আসল। নুপুর এসে দেখে এরা সবাই ঝগড়া করছে নুপুর ওদের কাছে চলে গেলো।
নুপুর -- কিরে তোরা ঝগড়া করিস কেন? কি হইছে তোদের?
-- দোস্ত তুই আমাকে হেল্প করবি একটা?
-- কি হেল্প!
-- জাহিদের সাথে আমার রিলেশন করিয়ে দে দোস্ত। ওঁকে আমার খুব ভালো লাগছে প্লিজ। 
 
চলবে -----------
 
 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url