শুকনো বকুলের মালা গাঁথিব | সূচনা পর্ব | নীহারিকা নুর | Garland of dried flowers | Introduction | Neharika Noor


বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নতুন অধ্যাপক তাঁর ক্লাস নিতে শুরু করলেন। যে মুহুর্তে তিনি পড়ানোর জন্যে ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে ঝুঁকলেন, সেই সময় ছাত্রদের মধ্যে কেউ একজন হঠাৎ করেই সিনেমা হলের মতো জোরে শিস বাজালো।
অধ্যাপক ঘুরে ক্লাসের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কে, কে শিস দিয়েছে? কে সিটি মারলো?
 
কেউ উত্তর দিলোনা। সবাই চুপ। 
সবাই এমন ভাব করেছে যেন কেউ কিছু শুনেনি বা দেখেনি।
 
অধ্যাপক শান্তভাবে চকটি টেবিলে রেখে বললেন, আজ আর লেকচার দেবোনা। তবে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া একটি গল্প শোনাব তেমাদের।
সবাই আগ্রহী হয়ে নড়ে চড়ে বসলো। অধ্যাপক গল্প শুরু করলেন।
গতকাল রাতে আমি ঘুমানোর জন্য খুব চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ঘুম আমার চোখ থেকে কয়েক মাইল দূরে আছে মনে হলো। ভাবলাম, ঘুম যখন আসছেনা আমার গাড়িতে রাতে পেট্রোল ভরে রাখি। যা কাল সকালের ভিড়ে আমার সময় বাঁচাবে এবং তারপর নির্বিঘ্নে আমি ঘুমাতেও পারবো।
 
গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে ট্যাংকটি পরিপূর্ণ করে নেয়ার পরে দেখি পুরো রাস্তা খালি। চারিদিকে ঠান্ডা বাতাস, আকাশে হালকা মেঘের আড়ালে আধো চাঁদ। তাই ভাবলাম একটু আশেপাশে ঘুরেই আসি। 
 
একটু সামনে অগ্রসর হতেই হঠাৎ রাস্তার পাশের এক কোণে আমি একজন ভদ্রবেশী তরুণী মেয়েকে দেখলাম। আলো আঁধারিতে দাঁড়িয়ে আছেন অসহায় ভাবে। যেই রকম সুন্দরী সেই রকম সুন্দর পোশাক তাঁর! পোশাকটি দেখে মনে হচ্ছিলো তাঁর রূপের সঙ্গে ম্যাচ করে কোন নিপুণ শিল্পী এটি বানিয়েছেন! নিশ্চয়ই কোনও পার্টি থেকে ফিরছেন তিনি। আমি চোখ ফেরাতে পারছিলাম না! প্রথম নজরেই প্রেমে পড়ে গেলাম। 
 
সৌজন্যতা বোধ হারিয়ে আমি আমার গাড়িটি ঘুরিয়ে তাঁর পাশে থামাই। গাড়ির কাচ নামিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'আমি কি আপনাকে কোনো সহায়তা করতে পারি ? যদি কোন সাহায্য করতে পারি তবে বলুন।'
 
তরুণীটি হেসে উঠলো সলজ্জভাবে। তাঁর শুভ্র দন্তরাজীর ঝিলিক দেখে মনে হলো, যেন সন্ধ্যাতারা রাস্তার কোণ জুড়ে নেমে এসেছে। 
 
তিনি মৃদু হেসে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ' আপনি কি আমাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারবেন ? ' তার গাড়িটি আসবেনা কারণ স্টার্ট নিচ্ছেনা বলে জানিয়েছে তার ড্রাইভার। আর সে কোন ট্যাক্সিও পাচ্ছেনা অনেক্ষণ ধরে। 
 
আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো। আমি গাড়ি থেকে নেমে তাকে আমার সামনের দরজা খুলে দিলাম। তিনি আমার সাথে সামনের সিটেই বসলেন সানন্দে।
অতঃপর আমি তাকে নিজের পরিচয় জানিয়ে বললাম, আমি আপনাদের এলাকারই পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। 
 
উনি উনার পরিচয় জানালেন। আমরা কথা বলতে শুরু করলাম এবং অবাক হয়ে দেখলাম তিনি খুবই বুদ্ধিমতী! বিভিন্ন ধরণের টপিক নিয়ে আলোচনা করার পর বুঝলাম; সবগুলো বিষয়ের উপরই তাঁর প্রভুত জ্ঞান আছে। যা আজকালকার অনেক যুবকেরই নেই।
অনেক দূরে তাঁর ঠিকানায় যখন পৌঁছলাম, তিনি আমার বিনয় প্রকৃতি ও সুন্দর আচরণের প্রশংসা করে বললেন, আমরা দুজনেই মুক্ত মনের মানুষ। 
 
আমাদের আবার দেখা হতে পারে। এবং লজ্জাবতী পাতার মতো গুটিয়ে না গিয়ে বলেই ফেললেন, আমার মতো একজন যুবক ছিল তাঁর কল্পনায়। রাখঢাক না করেই জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি বিবাহিত? আমি বুঝে ফেললাম, তিনিও প্রথম দর্শনেই আমার প্রেমে পড়েছেন।
 
আমি বললাম, আপনার অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে প্রথমেই আমি গাড়ি ঘুরিয়েছিলাম। এই রকম একজন রাজকন্যার স্বপ্ন আমি দেখতাম, যে দেখতে ঠিক আপনার মতো হবে এবং আমি ভাবতাম তাকেই আমি বিয়ে করবো। তারপর আপনার জ্ঞান, বুদ্ধি ও কথার গভীরতা শুনে আমি খোলাখুলি বলছি, ইতিমধ্যে আমিও আপনার গভীর প্রেমে পড়ে গেছি।
মেয়েটি বললো, আসুন আমাদের এপার্টমেন্টে। চা খাবেন ও আরো কিছুক্ষন গল্প করা যাবে।
প্রেম যখন প্রকাশিত হয়েই গেছে দুই তরফে, তাহলে আর দ্বিধা রেখে লাভ কি। ওর বাসার ভেতরে চলে গেলাম। 
 
আরো কিছুক্ষণ গল্প করে বিদায় নেয়ার সময় সে আমাকে বললো, শুনুন, আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করেছেন, আমার ভাই সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। মানে আপনারই ছাত্র হবে। যদিও সে এখন বাসায় নেই। আপনি ওর দিকে একটু খেয়াল রাখবেন যেন ঠিকমতো পড়াশুনা করে। এখন থেকে আমাদের মধ্যে যেহেতু একটি সুন্দর সম্পর্ক হয়ে গেছে সেহেতু এটি আপনার দায়িত্ব হয়ে গেল।
আমি বললাম, তোমার ভাইয়ের নাম কি?
 
আমার নব্য প্রেমিকা বললো, আপনি আর আমি পরস্পরকে আমাদের প্রখর বুদ্ধিমত্তার কারণে স্বল্প সময়ে ভালোবেসে ফেলেছি। আপনি আপনার বুদ্ধি দিয়ে খুঁজে বের করবেন তাকে। তাই আমি তাঁর নাম বলছি না। তবে আমার ভাইয়ের একটা বৈশিষ্ট আছে যা দিয়ে আপনি তাকে চিনতে পারবেন।
 
বললাম, আচ্ছা। তাহলে বলো কি সেই বৈশিষ্ট?
আমার প্রেমিকা বললো, সে প্রায়ই হঠাৎ জোরে শিস দেয়!
পুরো ক্লাসের সমস্ত চোখ তৎক্ষণাৎ যে ছেলেটি শিস দিয়েছিল তাঁর দিকে ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়ে রইলো। 
 
অধ্যাপক ধীরে ধীরে চকটি আবার হাতে উঠিয়ে নিয়ে গম্ভীর ভাবে বললেন: "আমি মনোবিজ্ঞানে আমার পিএইচডি ডিগ্রিটি কিনিনি, আমি এটি অর্জন করেছি।"
মূল থিম: বিজ্ঞ অধ্যাপক একটি কাল্পনিক গল্পের মাধ্যমে ক্লাসে শিস দেয়া ছাত্রটিকে খুঁজে বের করলেন।
========== 00 ============= 00 ================ 00 ================
পাশের বাড়ির ভাবীর জামাই দুবাই গেছেন কিছুদিন হলো। তো সহজে কথাবার্তা বলার মাধ্যম হিসেবে ইমো ইনস্টল দিয়ে দিলাম। প্রায়ই দেখি জানালা খুলে কানে হেডফোন লাগিয়ে হেসে হেসে কথা বলেন। ডিজিটাল বাংলাদেশের কল্যাণে বেশ ভালোই চলছে যোগাযোগ। 
 
উঠোনে বসে বাড়িসুদ্ধ লোক ভাইয়ের সাথে কথা বলে। ভাবী গোয়াল ঘরে গিয়ে গরুটাকে দেখায়। গাছে আম আসছে সেগুলো দেখায়। উঠোনের পাশের মিষ্টি কুমড়ার গাছটা দেখায়। আরও হাবিজাবি। এসব দেখে অন্য মহিলারা আবার অনেক সময় এটাসেটা বলে। হিংসা হয় তাদের। 
 
সমস্যার সৃষ্টি হলো ইমোর বিজ্ঞাপন নিয়ে। ভাবী বলে এসব কি আজেবাজে মেয়েছেলের ছবি আসে সামনে। এগুলো কি? তোমার ভাইয়ের মোবাইলেও আসে নাকি এগুলো! আমি অনেক কষ্টে বুঝাইলাম ব্যাপারটা। 
 
সবকিছু ঠিকঠাক চলতেছিল। সেদিন দুপুরে প্রচন্ড গরম। বাড়ির সামনে গাছতলায় বসে ছিলাম। এক পিচ্চিকে দিয়ে ভাবী যাওয়ার জন্য খবর পাঠালো। তো গিয়ে দেখি ভাবী উঠোনে রোদের মধ্যে ধান নাড়তেছেন। ঘেমেঘুমে একাকার। আমাকে দেখে মোবাইলটা হাতে ধরিয়ে বললো সাগর আমার একটা হ/ ট ছবি তুলে দাও। 
 
আমিতো টা/ স্কি খেয়ে অ/জ্ঞা/ন হবার পালা। তোমার ভাই দুইদিন ধরে হ/ ট ছবির জন্য মাথা খাচ্ছে। কি করব বলো দুইদিন তো রোদই ছিল না। বৃষ্টিতে কি আর গরমের ছবি দেওয়া যায়। আমি আর কিছু বলি নাই, ভাবী ধানের মধ্যে ঘেমেঘুমে দাঁড়িয়ে আছেন আমি ছবি তুলে দিয়েছি। পরে কি হয়েছে আর জানিনা। উনি আর আমার সামনে আসেন না 
============ 00 =========== 00 =========== 00 ============
আরবি ভাইয়া আর অলি আপুর নোংরামো দেখে কিছুতেই ছাদে দাঁড়িয়ে থাকতে পারালাম না।মুহুর্তেই চলে আসতে নিলে হাত থেকে বালতি টা পরে যায়।যার ফলে আরবি ভাইয়া আর অলি আপু আমায় দেখে নেয়।
অলি- দিনা তু তুই এখানে?(তোতলিয়ে)
আরবি- দিনা নিচে যা(রেগে)
কথাটা বলে আরবি নিজেও তাড়াতাড়ি করে নিচে চলে যায়।
অলি- দাঁড়া কোথায় যাচ্ছিস তুই?
দিনা- অলি আপু আমি ছাদে.......
ঠাসসসস........
অলি- বাড়ির কাজের মেয়ে কাজের মেয়ের মতো থাকতে পারিস না নাকি?নেক্সট এ ছাদে আসতে হলে নিচ থেকেই জেনে আসবি কেউ ছাদে আছে কি না।
দিনা- জি আপু।
অলির কথাগুলো গায়ে লাগার মতো হলেও কিছুই বলার ছিলো না দিনার।কারন দিনা এতিম। চাচ্চুর কাছেই ৭ বছর বয়স থেকে আছে দিনা।
 
তবে বাড়ির সব কাজ দিনাকে দিয়েই করানো হয়।
কাপড় শুকোতে দিয়ে নিচে আসে দিনা।
বড় আব্বু- দিনা......দিনা.........
দিনা- এইতো বড় আব্বু।কি হয়েছে?
বড় আব্বু- আজ অনুষ্ঠানে এটা পরবি তুই।(একটা ব্যাগ দিয়ে)
অলি- দেখি তো কি এটা(ব্যাগটা নিয়ে)
ওয়াও লেহেঙ্গা? মামা এটা আমি নিই না।প্লিজ..........
বড় আম্মু- এত দাম দিয়ে লেহেঙ্গা টা না নিয়ে কম দামের সিট কাপড় এনে দিলেই পারতে।শুধু শুধু টাকা নষ্ট।
জেসি- মম প্লিজ........ কি এমন দিয়েছে একটা লেহেঙ্গাই তো।আর কাল তোমাদের বিয়ের বিবাহবার্ষিকী অনুষ্ঠান হবে সবাই দামি জামা- কাপড় পরবে দিনা কম দামি জামা পরলে সবাই কি মনে করবে?
বড় আম্মু- হ্যা তাও ঠিক।
 
দি......... দিইইইইই......(জোরে জোরে)
বড় আব্বু- দিনা ইহান তোকে ঢাকছে।যা পরে রেগে যাবে।
দিনা- জি বড় আব্বু।
.
.
.
দিনা- জি ভাইয়া।
ইহান- তুই রেডি হবি কবে?
দিনা- ভাইয়া আজ বাড়িতে অনেক কাজ। আমি আস....(অনেক কাজ মানে)
দিনা- ভাইয়া আমি যেতে পারবো না।
ইহান- কোন ক্লাস এ পড়িস তুই?(রেগে)
দিনা-ক্লাস ৮ এ ভাইয়া......
 
ইহান- তাহলে বুড়ির মতো এতো কাজ করিস কি করে?আর সেদিন তো সবার সামনে বলেই ছিলাম যে তোকে দিয়ে যাতে কাজ না করানো হয়।তাও করিস কেন?(ঝাঁকড়া দিয়ে)
দিনা- ভাইয়া আমি ব্যাথা পাচ্ছি।
 
ইহান দিনাকে ছেড়ে দেয়।এ বাড়িতে বড় আব্বু,আর ইহানই দিনাকে নিজের বাড়ির মানুষ মনে করে।আর দিনার সব কিছু নিয়ে ভাবে।
ইহান রাগি স্বভাবের হলেও তার কথার উপর কেউ কথা বলে না।দিনার পড়ালেখার ব্যাপারে ইহান খুবই সাবধান।
ইহান- মম......মম.........
 
বড় আম্মু- কি হয়েছে?
ইহান- তুমি আবারো দিনাকে দিয়ে কাজ করাচ্ছো?মম জেসি ভার্সিটি পড়ে,এত বড় হয়েও এক গ্লাস পানি নিয়ে খায় না আর তুমি....... মম দিনার বয়স টাই বা কত?এ বয়সে এসব কাজ কেন করাচ্ছো?ওর প্রবলেম হবে ফিউচারে......(বলেই ব্রেকফাস্ট না করেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়)
 
অলি- দেখছো মামানি ইহান না খেয়েই বাড়ি থেকে চলে গেলো।
বড় আম্মু- এই মেয়েটা দিন দিন আমার ছেলেটাকে কি করে ফেলছে।আপদ একটা।
জেসি- কেন মম?ভূল কি বলেছে?(বলেই চলে যায়)
বিকেলে.....
ইহান- দি.......দিইইইইইইই
দিনা- জি ভাইয়া......
ইহান- এগুলো নে.....
দিনা- এগুলো তো অনেক জামা।
ইহান- মাত্র ৪ টা থ্রি-পিছ আছে।
 
আমি তোকে আরো একটা জিনিস দিতে চাই।চল চোখ বন্ধ কর।
দিনা- আচ্ছা।
চোখ খুলতেই দিনা হাতের কাছে একটা ফোন পায়।খুশি হলেও দিনা ভালো করেই জানে বড় আম্মু জানলে আজ বাড়িতে আবারো জামেলা হবে।দিনা ফোন দিয়ে চলে যেতে নিলেই ইহান হাত ধরে ফেলে।
ইহান- দাঁড় দি.......(ইহান আদর করেই দি ঢাকে)
দিনা- জি।
ইহান- তোর জামা টা উঠাতো।
দিনা- কিইই?ভাইয়া এসব তুই কি বলছিস?
ইহান- শাট আপ.....তুই উঠাবি নাকি আমি.......
 
দিনা তাড়াতাড়ি করে যেতে নিলেই ইহান আবারো দিনাকে ধরে ফেলে আর জামার কিছুটা অংশ উঠানোর পর লাল লাল মারের দাগ স্পষ্ট বোজা যাচ্ছিলো।ইহানের ১ মিনিট ও লাগেনি পুরো ব্যাপার টা বুজতে।ত্যাড়া মেজাজি মাথায় আরো বিগড়ে যায়।কিন্তু ইহান রাগি হলেও উত্তেজিত নয়।ঠান্ডা মাথায় কাজ করে।
ইহান- চল তোকে মলম লাগিয়ে দেই।
দিনা- না ভাইয়া আ..........
 
ইহান- আচ্ছা আমি লাগাবো না তুই লাগিয়ে নিস।এ নে......(মলম দিয়ে)
দিনা- আচ্ছা।
পুরো ব্যাপার টা বড় আম্মু দরজাত বাহির থেকে দেখলেও কোনো শব্দ করেননি।দিনা ইহানের ঘর থেকে বেরোনোর পরই দিনার পিছু পিছু বড় আম্মু ও যায়।
_____________
দিনা- বড় আব্বু তুমি নাস্তা খেয়েছো?
বড় আব্বু- হ্যা।
দিনা- কেন ঢেকেছো?
বড় আব্বু- এই টাকাগুলো রাখ।(৪০০০ টাকা দিয়ে)
দিনা -কেন আব্বু?(কান্না করে)
বড় আব্বু- এ বাড়িতে আমি আর ইহান ছাড়া কেউই তো তোকে টাকা দেয় না।ইচ্ছে হলো তাই দিলাম।রেখে দে।আর কাল লেহেঙ্গা টা পরবি কিন্তু।
দিনা- আচ্ছা।
 
থিতি লক্ষ্য করে দিনা।
দিনা- বড় আম্মু তুমি?কিছু করতে.....(বলতে না পেরে)
বড় আম্মু- আমার ছেলের মাথাটা ভালোই খেয়েছিস।কেউ লেহেঙ্গা দিচ্ছে কেউ নিত্য পরার জন্য জামা দিচ্ছে আবার মলম লাগানো হচ্ছে তাই না?
 
কথাগুলো বলতে বলতেই দিনার গালে ২ টা থাপ্পড় বসিয়ে দেয় বড় আম্মু।
থাপ্পড়ের শব্দ ঘরের বাহিরে না গেলেও রাগের কারনে বড় আম্মু উপরোক্ত কথাগুলো বেশ চিৎকার করেই বলেছিলেন।এবং ইতিমধ্যে ইহানসহ বাড়ির সবাই উপস্থিত হয়ে যায়।
ইহান- বাহ মম!!! কাজ টা একদম ভালো করেছো।তবে মার টা আরো বেশ জোরে হলে ভালো হতো।(বলেই দিনাকে টেনে উঠিয়ে থাপড়াতে শুরু করে)
 
ইহান দিনার চুলের মুঠি ধরে আঘাত করতেই থাকে শরীরে।বাড়ির সবাই হা করে তাকিয়ে তামাশা দেখছে কারন যে ইহান দি...দিইই বলে,,,বোন বোন বলে বাড়ির সবার সাথে দিনার হয়ে ক....................
চলবে.............
গল্প-#অবহেলা
পর্ব- ০১
============ 00 ============= 00 ============= 00 ============ 
প্রথম স্ত্রীর লা'শ ঘরের সামনে রাখা এখনো দাফন করা হয়নি এর মধ্যে দ্বিতীয় বিয়ে করে নতুন বউ নিয়ে বাড়ির আঙিনায় পা রাখল রশিদ সিকদার।
 
তার প্রথম স্ত্রী জায়েদা বেগম আজ সকালে মা'রা গেছেন। মাস কয়েক আগে হঠাত অসুস্থ হয়ে পড়ায় হসপিটাল নিলে ডক্টর জানায় তিনি স্ট্রো'ক করেছিলেন। জ্ঞান ফিরে আসলেও তিনি প্যারালাইজড হয়ে গিয়েছিলেন। কয়েকদিন যাবত অসুস্থ ফিল করায় তাকে হসপিটালাইজড করদ হয়। কিন্তু তিনি আর সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরে আসেন নি। তার মৃ'ত দেহ নিয়ে আসা হয়েছে। সারা বাড়ি মানুষ গিজগিজ করছে। 
 
জায়েদা বেগম ছিলেন বেশ মিশুক স্বভাবের মানুষ। তাই আশপাশে অনেক মানুষের সাথেই তার বেশ ভাব ছিল। আজ জায়েদা বেগমের মৃ'ত্যুর খবর শুনে কেউই আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি। ছুটে এসেছে একবার দেখার জন্য। কিন্তু রশিদ সাহেবের এমন কাজে সবাই যেন হতভম্ব হয়ে গিয়েছে। জায়েদা বেগম কোনদিন কারো কাছে তার স্বামীর ব্যাপারে খারাপ মন্তব্য করেন নি বরং সব সময় তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। কিন্তু রশিদ সাহেব সেই ভালোর এই প্রতিদান দিল।
সবাই রশিদকে নিয়ে সমালোচনায় মত্ত হলো। 
 
এ বাড়িতে যে এখনো অনেক কাজ বাকি পরে রয়েছে একটি মৃ'ত ব্যাক্তিকে দাফন কাফন করাতে হবে তা যেন ভুলেই বসল সবাই। এতক্ষণ যাবত দাতে দাত চেপে এতক্ষণ এসব সহ্য করছিলেন রশিদের বড় ভাই রায়হান সাহেব। আর সহ্য করতে না পেরে সামনে এগিয়ে আসলেন। রশিদ মিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন
- এসবের মানে কি রশিদ। আমরা যে একটা সমাজে বাস করি এটা কি তুই ভুলে গেছিস। কীভাবে একটা মেয়েকে আজই এই বাড়িতে নিয়ে আসতে পারিস। তোর কি জায়েদার জন্য একটুও কষ্ট হচ্ছে না।
 
- দেখেন ভাইজান যা হওয়ার তাতো হয়েই গেছে। জায়েদা চলে গেছে ওর জন্য দুঃখ করে কি হবে। আর এ হচ্ছে ঝর্না। ও আমার দ্বিতীয় স্ত্রী। ওকে আমি আজকে বিয়ে করিনি। অনেক দিন আগেই করেছি। শুধু ওই মহিলা বেচে ছিল বলে এই বাড়িতে আনতে পারি নি।
রায়হান সাহেব এবার ছোট ভাইয়ের দুই গালে দুটো চ'ড় বসিয়ে দিলেন।
- ভাইজান তুমি আমার গায়ে হাত তুললা। এটা তুমি করতে পারলা।
 
- এই চড় আরো আগেই দেয়া উচিত ছিল। তুই জায়েদার জীবন এভাবে নষ্ট করছিস
। ছিঃ তোকে ভাই বলতেও তো আমার ঘৃণা লাগতেছে। জায়েদা কত ভালো একটা মেয়ে ছিল। নিজের ভাইয়ের জায়গায় আমাকে বসিয়েছে আর ও যে ওর স্বামীর দ্বারাই এত কষ্টে ছিল একটা বার বুজি নাই। তাইলে এই চড় তোকে আগেই মা'রতাম
- কে বলছে নষ্ট করেছি। ও বেচে থাকতে ওর ভাত কাপড় কোন কিছুতে কষ্ট দিছি আমি। দেই নাই। বিশ্বাস না হলে জিগেস করে ওকে।
 
- গাধা ও কীভাবে বলবে। কি ড্রামা শুরু করছিস৷ বেরিয়ে যা এই বাসা থেকে।
- কেন বের হবো। বলো আমারে। এ বাড়ি কি তোমার একার। এটা আমার ও বাবার বাড়ি। এইখানে যতটুক তোমার অধিকার ততটুক আমারও। আর কথা বাড়াইও না ভিতরে যেতে দাও।
রায়হান সাহেব এর মাথা এবার চরম লেভেলের খারাপ হয়। যেই ছোট ভাইরে এত আদর কইরা ভালোবাসা দিয়া বড় করছে সে আজ মুখে মুখে তর্ক করে। তাই রা'গের বসে উল্টা পাল্টা থাপড়ানে শুরু করে রশিদকে। 
 
যারা এসেছিল তারা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ফ্রিতে ড্রামা দেখতেছিল কেউ আগাইয়া আসে নাই। রশিদ বড় ভাইয়ের সম্মান এতটুকু রাখছে যে উল্টো বড় ভাইয়ের গায়ে হাত তোলে নাই।
হঠাৎ নিজের পায়ের কাছে ভারী কিছু পড়ল মনে হলো রায়হান সাহেবের। নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলেন তার পা জড়িয়ে বসে আছে ভাতিজি নুর।
- কিরে মা তুই নিচে বসে পড়লি কেন?
- চাচ্চু তুমি আর আব্বুকে মে'রো না।
 
- মা ও যা করেছে তাতে কি ভালো ব্যবহার পাওয়ার যোগ্য?
- চাচ্চু ভুল তো মানুষই করে। আব্বুও করে ফেলেছে।
- তুমি কীভাবে মানবে
 
- ধরে নাও এটাই আমার নিয়তি। যে সময় বাবাকে আমার সবচেয়ে বেশি দরকার সেই মুহুর্তে বাবা আমাকে পর করে দিয়ে অন্য কাউকে আপনজন ভেবে সুখে থাকার প্রয়াস চালাচ্ছে। চাচ্চু মা তো তার সাথে আমাকে নিয়ে গেলেও পারত। এই দুনিয়া বড় কঠিন চাচ্চু। আমিও মায়ের সাথে চলে যেতাম তাহলে বাবা হয়ত খুশি হতো।
যে মেয়েটা কয়দিন আগেও ফোন দিয়ে বলত চাচ্চু বাসায় আসলে আইসক্রিম নিয়া আসবা এরা আনবা ওটা আনবা। বাচ্চাদের মতো বায়না করত সেই মেয়ে কয়েক মুহুর্তের মাঝে কেমন বড়দের মত কথা বলা শুরু করেছে। পরিস্থিতি মাঝে মাঝে মানুষকে বদলে দেয়।
রায়হান সাহেব দুহাতে নুরের কাধ ধরে উঠালেন। মাথায় হাত বুলালেন। নুর চাচ্চুর গলা ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল।
 
মেয়ের এরকম কান্না দেখে রশিদ সাহেবের মন হয়ত একটু গলল৷ এগিয়ে গিয়ে মেয়ের মাথায় হাত রাখতে নিলে মেয়ে তার হাত মাথা থেকে সরিয়ে দিল।
- আমি ভালো আছি বাবা তেমাকে চিন্তা করতে হবে না।
রায়হান সাহেব নুরকে সেখান থেকে নিয়ে ভিতরে আসলেন। এসে ফ্যান ছেড়ে বসিয়ে দিলেন। এক গ্লাস পানি সামনে ধরে বললেন শান্ত হও মা।
 
নুর কোনো মতেই শান্ত হতে পারছিল না। মাকে চিরতরে হারিয়ে ফেলার বেদনা বাবার এমন নিকৃষ্ট কাজ নুরকে যেন ভেতর থেকে ভেঙে দিয়েছে। থেমে থেমে হিচকি উঠছে শুধু। চারদিক থেকে মানুষ এসে এর মধ্যে এই রুম ঘিরে ফেলেছে। সবার কেন্দ্র বিন্দু হচ্ছে নুর। নুর কাঁদছে সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছে। মৃ'ত বাড়িতে তো কত মানুষ আসে। যারা আপনজন হারায় তারা বুক ফাটিয়ে কাঁদে। বাহিরের যারা আসে তারা দাড়িয়ে দাড়িয়ে সেই কান্না দেখে কিন্তু যে আপনজন হারিয়েছে তার বুক যে কতটা পুড়ছে সেটা কেউ বুজতে পারেনা। 
 
বাহিরে প্রচন্ড গরম আর এত মানুষের ভীরে তা ঢ়েন আরো বাড়ছে। সহ্য করতে না পেরে হাসফা'স করছে নুর। স্কিনে র্যাশ বেরিয়ে কেমন লাল হয়ে যাচ্ছিল। রায়হান সাহেব খেয়াল করতেই গলা উচিয়ে তার স্ত্রী খালিদা বেগমকে ডাকলেন। ডাক শুনে সাথে সাথে ছুটে আসলেন খালিদা। 
 
- কি হলো ডাকলেন যে।
- দেখো মেয়েটা কেমন হাসফা'স করতেছে।
নুরের দিকে তাকিয়ে চমকে যায় খালিদা বেগম ও। তারপর বলে ওঠে
- মেয়েটা এই গরম, এত প্রেশার সহ্য করতে পারতেছে না।
- সহ্য করবে কি করে। জায়েদা যে ওকে পুতুলের মতো হাতে করে করে বড় করেছে। কষ্ট কাকে বলে বুজতেই দেয় নি। হয়েছেও পুতুলের মতো। একটু ছুলেই যেন রক্ত বেরিয়ে যাবে। ইয়া আল্লাহ এই মেয়ের উপর রহম করো একটু। ওকে আর কষ্ট দিও না আল্লাহ।
- ও আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে। ওকে একটু নিরিবিলি জায়গায় রাখা দরকার। সবাইকে একটু বাহিরে যেতে বলেন।
- আচ্ছা আচ্ছা। 
 
আস্তে আস্তে সবাই রুম ছেড়ে বাহিরে আসে। খালিদা বেগম একটা টাওয়াল ভিজিয়ে তা দিয়ে মুখ হাত পা মুছিয়ে দেয় নুরের। নুর মাকে দেখার জন্য বললে খালিদা নিজে নুরকে ওর মাকে দেখানোর জন্য নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে মায়ের বুকের উপর লুটিয়ে পড়ে নুর। মায়ের কাছে যত অভিযোগ আছে বলতে থাকে। বারবার একটা কথাই উচ্চারণ করে - মা তুমি কেন নিয়ে গেলেনা আমায়।
খালিদা বেগম অনেক কষ্টে নুরকে সেখান থেকে নিয়ে আসেন। রুমে বসিয়ে দিয়ে এক গ্লাস জুস আনেন ওর জন্য। নুর খেতে চায় না তাও জোড় করে মুখে দেন খালিদা বেগম। জুসটা খাওয়ার পর নুরের কেমন যেন ফিল হয়। মনে হচ্ছে চোখ আর খুলে রাখতে পারতেছে না। অনেক কষ্টেও চোখ খুলে রাখতে পারতেছে না। চাচিকে বলে
- বড়মা এটা কি দিলা তুমি আমাকে। মনে হচ্ছে চোখ টেনেও খুলতে পারছি না। আচ্ছা আমিকি মায়ের কাছে চলে যাচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে মা আমার কথা শুনেছে তাইত তার সাথে নিয়ে যাচ্ছে। জানো বড়মা মা আমাকে অনেক ভালোবাসত আমার সব কথা শুনত তাইত এখনও ফেলতে পরে নি। বড়মা তোমার জুসটা অনেক মজা ছিল। এটা খেয়েছি বলেই মা আমার কথা শুনল।
আর বলতে পারে না নুর। লুটিয়ে পড়ে বেডের উপরে।
চলবে ------------- 

শুকনো_বকুলের_মালা_গাঁথিব
সূচনা_পর্ব
নীহারিকা_নুর
============ 00 ================= 00 ================
[আসসালামু আলাইকুম।কেমন আছেন সবাই।অনেক দিন পর আবার একটু লিখলাম। কি লিখেছি নিজেও জানিনা। ভালো বা খারাপ যাই হোক কমেন্ট এ জানাবেন]

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url